Friday, March 28, 2008

একজন নিরিবিলি মানুষ

শহীদুল জহিরের সঙ্গে আকষ্মিকভাবে পরিচয় হয়েছিল। তারপর তাঁরা ঘনিষ্ঠ হয়েছেন, ঘনিষ্ঠ থেকেছেন। সেসব দিনের কথা লিখেছেন মোহাম্মদ সাদিক
___
আশির দশকের শেষ থেকে গ্রিন রোডে অফিসার্স হোস্টেলে সিভিল সার্ভিসের ৭০-৮০ জন কর্মকর্তা থাকতেন। তিনটি ভবনের মধ্যে দুই নম্বর ভবনের নিচতলায় প্রথম বাঁ পাশের ইউনিটে বাস করতেন একজন নিরিবিলি মানুষ। বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি সৌহার্দ্য ও হূদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। বেশির ভাগ কর্মকর্তা অবিবাহিত হিসেবে হোস্টেলে উঠলেও পরে তাঁদের অনেকেই সস্ত্রীক এই হোস্টেলে বাস করতে শুরু করেন। কিন্তু দুই নম্বর ভবনের নিচতলার বাঁ পাশে দুই নম্বর ইউনিটের ভদ্রলোক অন্যদের চেয়ে জ্যেষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও একাই আছেন। কডের প্যান্ট, ব্লেজার এবং কিছুটা ভারী জুতো পরে গম্ভীর ভঙ্গিতে সিনা টান টান করে আশপাশে না তাকিয়ে দীর্ঘ পদক্ষেপে তিনি যখন হেঁটে যেতেন, তখন তাঁর সঙ্গে কুশল বিনিময় করার সাহসও সবার হতো না। আমি নিজেও সসংকোচে তাঁর পথ ছেড়ে দিতাম। তার কারণ, তিনি সার্ভিসে আমার এক ব্যাচ সিনিয়র, তাঁর গাম্ভীর্য এবং ব্যক্তিত্ব আমার কাছে প্রাচীরের মতো মনে হতো।একদিন তাঁর পাশের ইউনিটের কর্মকর্তার সঙ্গে জম্পেশ আড্ডা দিয়ে তাঁর ইউনিটের সামনে দিয়ে ফিরছি, খোলা দরজা দিয়ে দেখি একটি খাটের ওপর সাদা খদ্দরের চাদর গায়ে শুয়ে আছেন তিনি। ঘরময় ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে অনেক বই। কিছুটা কৌতুহল হয়, আমি দাঁড়িয়ে পড়ি। দরজার পাশেই দেখতে পাই ধুলোর আস্তরণে ঢাকা কিছু বই। গ্যেটের ফাউস্ট, হোমারের ইলিয়াড, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুলনাচের ইতিকথা, আরও অনেক দেশি-বিদেশি দামি বই। আমি তাঁর দরজায় দাঁড়িয়ে আছি দেখে তিনি উঠে বসলেন। আমি সব শঙ্কা, ভয় উপেক্ষা করে তাঁকে সালাম দিয়ে ঘরে ঢুকি। তিনি কিছুটা ব্যস্ত হয়ে আমাকে কোথায় বসতে দেবেন ভেবে চারদিক তাকালেন, তারপর একটি বেতের চেয়ার দেখিয়ে আঙ্গুলের ইশারায় বসতে বললেন। আমি দেখলাম, ঘরজুড়ে আরও অনেক বই। একটি শোকেস, একটি ছোট টেবিল, চেয়ার; পাতলা একটি বিছানা, তোশক আছে বলে মনে হয় না। আমি কথা শুরু করতে পারছিলাম না। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'কেমন আছেন?' আমি আমতা আমতা করে কী বলেছিলাম মনে নেই। পরে অনেক কষ্টে তাঁকে শুধু বললাম, আপনার ফ্লোরে তো অনেক দামি বই ছড়িয়েছিটিয়ে আছে, এখান থেকে কিছু বই ফেরত দেওয়ার শর্তে পড়ার জন্য নিতে চাই।তিনি হাসলেন। এই প্রথম তাঁকে আমি হাসতে দেখি। তিনি সরাসরি বললেন, 'বই নেবেন? নিয়ে যান।' আমি সত্যি সত্যি বাচ্চা ছেলের মতো বই কুড়াতে শুরু করি। কোনার দিকে একই ধরনের কিছু গাদা করা বই। জিজ্ঞেস করি, একই বইয়ের এত কপি কেন? তিনি বললেন, 'আমি লিখেছিলাম, হাਆানী থেকে বেরিয়েছিল। বিক্রি হয় না দেখে রেখে দিয়েছি। ওটা আপনার নিয়ে কাজ নেই।' আমি অন্য ক্লাসিকসের সঙ্গে এর একটি কপি নিই। আমার মনে হলো, যাঁর কাছ থেকে এতগুলো বই নিচ্ছি তাঁর নিজের লেখা একটি বই না নেওয়াটা শোভন হয় না।সময়ক্ষেপণ না করে তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিই। কিন্তু তাঁর ঘর, তাঁর জীবনযাপন এবং তাঁর বই নির্বাচনের ধরন দেখে আমার বিস্নয় আমি ভুলতে পারি না। তৃতীয় তলার নিজের ঘরে ফিরে বইয়ের ধুলোবালি মুছে প্রথমে তাঁর লেখা বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে থাকি। পরে দেখা হলে তাঁর বইটি সম্পর্কে জানতে চাইতে পারেন। (সে বই শুধু নয়, তাঁর কোনো বই সম্পর্কেই কোনো দিন আমার প্রতিক্রিয়া জানতে চাননি)। লেটার প্রেসে ছাপা খুব সাদামাটা একটা বই। উপন্যাস। সাদাকালো প্রচ্ছদ এবং তাতে একটি আপেলের ছবি, বইয়ের নাম এবং লেখকের নাম। প্রচ্ছদ করেছেন লেখক নিজে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও পড়তে শুরু করি।প্রথম পৃষ্ঠা পড়ার পর আমি আর থামতে পারি না। এক বসাতেই ৬৪ পৃষ্ঠার বইটি পড়ে শেষ করি। তারপর নিচতলায় দুই নম্বর ইউনিটে ছুটে যাই। দেখি দরজায় তালা ঝুলছে। দুপুর থেকে রাত অবধি আমি বেশ কয়েকবার ওখানে যাই, তিনি ফেরেন না। অবশেষে বারান্দায় চেয়ার পেতে পথের দিকে তাকিয়ে বসে থাকি। রাত ১১টার দিকে অফিসার্স হোস্টেলের গেট দিয়ে ছায়ার মতো একটি দীর্ঘ শরীর, দীর্ঘ পদক্ষেপে হেঁটে আসতে থাকে। বুঝতে পারি, তিনি আসছেন। আমি দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসি। একটু অবাক হন তিনি। আমি আবেগ ধরে রাখতে পারি না; বলি, দুপুরে সাদাকালো মলাটের যে বইটি আমি নিয়েছিলাম, সেটি আমি পড়ে ফেলেছি এবং এটি আমার জীবনে পড়া শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। তিনি হাসতে হাসতে বললেন, 'তাই নাকি?' তাঁর এই হূদয়খোলা হাসি দেখে বুঝতে পারি, তিনি আমার স্বজন। আমি চার-পাঁচটি বই নিয়ে সমকালের সেরা কিছু লেখককে পৌঁছে দিই। বিচিত্রায় এক পৃষ্ঠার একটি রিভিউ লিখি। এই লেখকের নাম শহীদুল জহির এবং উপন্যাসটির নাম জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা। তাঁর নাম লেখকদের মধ্যে পৌঁছে যেতে থাকে। এ বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ বের হয় শিল্পতরু প্রকাশনী থেকে। তার একটি কপি আমাকে দিতে গিয়ে তিনি লেখেন−'এই বইয়ের দ্বিতীয় মা, কবি মোহাম্মদ সাদিককে।'যে মানুষটির চারপাশে এক অদৃশ্য দেয়াল ছিল বলে বহুদিন ভয়ে-সংকোচে তাঁর কাছে যাইনি, তিনি আমার প্রিয় মানুষে পরিণত হলেন। সাদামাটা, সাত্ত্বিক জীবন যাপন করতেন। পরিমিতিবোধ ছিল তাঁর প্রধান প্রবণতা। শীত, গ্রীষ্ক্ন, বর্ষা−সব সময়ই তাঁকে একটি খদ্দরের চাদর গায়ে শুতে দেখেছি। খুবই সাধারণ শক্ত বিছানা ছিল তাঁর। বই নির্বাচনে ছিলেন অত্যন্ত রুচিশীল। আবহমান বাংলার বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর কৌতুহল ছিল। চিরঞ্জীব বনৌষধি তাঁর সংগ্রহে দেখে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আয়ুর্বেদে আপনার আগ্রহ আছে? তিনি বললেন, না, তা নেই, কিন্তু এই বইয়ের বিভিন্ন বিবরণ থেকে তিনি তাঁর লেখার রসদ সংগ্রহ করেন। তাঁর নোটবুকে বিভিন্ন রেকর্ডস থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য পাই, যেমন:সিরাজগঞ্জে জিনিসপত্রের দামচালের মণ-১৮৭০−১.৫০ টাকাচাল টাকায়১৯১৩−৮.৫০ সের১৯১৮−১০.৩/৪ সের১৯৩০−৬ সের মজুরি কৃষি শ্রমিক−দৈনিক ১৮৪০−০.০৯ টাকা১৮৭৫−০.১৪ টাকাবাধাশ্রমিক বার্ষিক (২০-এর দশক) ৬০-৮৪ টাকা + খাবার + কাপড়এ রকম নানা তথ্য-উপাত্ত তিনি সংগ্রহে রাখতেন এবং লেখার মধ্যে ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনায় দিনক্ষণ, তারিখ কিংবা বার ব্যবহারে বাস্তবতার সমান্তরালে থাকতেন।দারপরিগ্রহ না করার বিষয়টি বেশ আলোচনার বিষয় ছিল। কারও এ বিষয়ে প্রশ্ন করার সাহস ছিল না। আমার ও আমার পরিবারের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে কেউ কেউ আমাদের কাছে তাঁদের কৌতুহলের কথা বলতেন। অন্যদের কৌতুহলের কথা দু-একবার তাঁকে বলেছি। তিনি হাসতেন এবং অন্যদের উৎকন্ঠার কথা বিবেচনা করে কিঞ্চিৎ হতাশ হতেন। একদিন এও বলেছিলেন, অনেক ভেবেচিন্তে এ বিষয়টি বাদ দিয়েছি। এ চ্যাপ্টার ক্লোজড।পড়াশোনা করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। ইংরেজিতে তাঁর দক্ষতা ছিল অসাধারণ। দাপ্তরিক কাজে তাঁকে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে হয়েছে। দেশের স্বার্থে বিভিন্ন ডকুমেন্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ক্ষেত্রে তিনি কখনো শৈথিল্য দেখাননি। আমার এক সহকর্মী মাসুদ সিদ্দিকী আমাকে বলেছিল, বিদেশে একটি নেগোসিয়েশন টিমের সঙ্গে কথা বলার প্রস্তুতি হিসেবে তিনি ওই সফরে হোটেলে রাত চারটা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিশাল ডকুমেন্টের প্রতিটি শব্দ ভালোভাবে যাচাই করে নিয়েছেন। আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তাঁর দক্ষতা ও সততা ছিল প্রশ্নাতীত। তাঁকে, তাঁর বিবেককে কিনতে পারে এ রকম চেকবই নিয়ে পৃথিবীতে কেউ ছিল না।দীর্ঘদিন গ্রিন রোডে প্রথমে দুই নম্বর ইউনিটের নিচতলায় ও পরে তৃতীয় তলার ১০ নম্বর ইউনিটে বাস করেন তিনি। তারপর বেইলী রোডে, অতঃপর ইস্কাটনে অরুণিমা-২। তাঁর খাওয়া-দাওয়া ছিল অদ্ভুত এক ছকে বাঁধা। তিনি টেবিলের ওপর টাকা রেখে যেতেন। কাজের বুয়া এসে তাঁর ইচ্ছামতো বাজার করে রান্নাবান্না করে হাঁড়ি-পাতিলসহ টেবিলে রেখে যেতেন। বুয়ার সঙ্গে কালেভদ্রে তাঁর দেখা বা কথা হতো। রান্নাবান্না সম্পর্কে কোনো মন্তব্য পাওয়া যেত না, যেমন রান্নাই হোক। কখনো চার্লি চ্যাপলিনের কথা বলতেন। একটি ছবিতে চার্লি চ্যাপলিন ভয়াবহ দারিদ্র্যের মধ্যেও একটি ডিম সেদ্ধ খাওয়ার জন্য ন্যাপকিনসহ প্লেট সাজিয়ে বসেছিলেন, এই রুচির প্রশংসা করতেন তিনি। তাঁর ভাষায়, 'চ্যাপলিন হলেন বিশ্ব-চলচ্চিত্রের ভদ্রলোক চরিত্র।' খুব সাধারণ কাপড়চোপড় পরতেন তিনি। দাপ্তরিক প্রয়োজন ছাড়া পারতপক্ষে টাই পরতেন না। কথা-আচার-আচরণে খুবই সংযত ছিলেন। কখনো কখনো তাঁকে আমার আধুনিক দরবেশ বলে মনে হয়েছে।লেখার জন্য আলাওল পুরস্কার পাওয়ার পর খুশি হয়েছিলেন। খুশির হওয়ার কারণ পুরস্কারটির নিরপেক্ষতা। রাত করে ফিরতেন। পুরস্কার পাওয়ার পর রাত ১২টায় আমরা তাঁকে অভিনন্দন জানাতে যাই। আমার মেয়ে সুরমা তাকে ফুল দেয়। পরে আজকের কাগজ পুরস্কার পেয়েছেন। সে জন্য তাঁকে আনন্দিত মনে হয়েছে। লেখালেখির বিষয়ে আড্ডা হতো তাঁর অথবা আমার ঘরেই। দু-একবার অন্য জায়গায় আড্ডা হয়েছে। লেখক হিসেবে অন্যদের মধ্যে সৈয়দ শামসুল হককেও তিনি গুরুত্ব দিতেন। একবার আমরা দুজন তাঁর একটি বই নিয়ে হক ভাইয়ের ওখানে গিয়েছিলাম। এমনিতে তাঁর ব্যাচমেট কিছু বন্ধু ছিলেন, যাঁদের সঙ্গে হয়তো ইতিপূর্বে তাঁর আড্ডা হতো। তবে আমাদের ব্যাচের আলী মোস্তফা চৌধুরী ও পুলিশের ফণীদাকে পছন্দ করতেন। লেখকদের সঙ্গে আড্ডায় যাওয়ার কথা বললে প্রায়শ আমাকে বলতেন, 'আড্ডায় গিয়ে কী হবে? একটি ভালো মন নিয়ে আড্ডায় গিয়ে ফিরে এসে দেখি, শরীরের এখানে-ওখানে রক্ত লেগে আছে। বাঘনখে অনেকে রক্তাক্ত করে দিয়েছে আমাকে। এ জন্য কোথাও যেতে ইচ্ছা করে না।'শিশুদের তিনি খুব পছন্দ করতেন। আমার বাচ্চারা ছিল তাঁর দারুণ ভক্ত। বাচ্চারা তাঁকে কেন এত পছন্দ করে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলতেন, 'কথা বলার সময় তাদের বাচ্চা মনে করবেন না, ব্যক্তি মনে করবেন। দেখবেন, তারা খুব খুশি হবে এবং ব্যক্তির মতোই আচরণ করবে। কিন্তু আমরা অনেকেই তা করি না।'পারতপক্ষে কখনো কাউকে বলতেন না যে, তিনি লেখেন। খুব কম লিখতেন। উলুখাগড়ার জন্য একটি গল্প চাইলে বলেছিলেন, 'এরপর যে গল্পটি লিখব, সেটি উলুখাগড়ায় দেব।' আমি আকরম স্যারকে (অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন) কথা দিয়েছিলাম লেখা আদায় করে দেব। শহীদ ভাই কথা দিলে কথা রাখতেন। সেই অলিখিত গল্পের কাহিনী ও নির্মাণশৈলী কী হতো, জানি না। তার আগেই শহীদ ভাই একটি অবিস্নরণীয় ছোটগল্পের মতো পৃথিবীকে পেছনে রেখে চলে গেলেন। মিরপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করার সময় আমার ছেলে সৃজন শোকার্ত হতে থাকে। আমার মেয়ে সুরমা জায়নামাজে বসে তাঁর শহীদ কাকুর জন্য প্রার্থনা করে। তার চোখে জল। তারা সচিব মো. শহীদুল হককে চেনে না। দেশবরেণ্য কথাশিল্পী তাদের কাছে বিবেচনার বিষয় নয়। তারা চেনে প্রিয় শহীদ কাকুকে। মানুষ শহীদুল জহির কেমন ছিলেন, তাদের চেয়ে আর কে ভালো জানে! ক্রিকেট খুব পছন্দ করতেন। উল্লেখযোগ্য ওয়ানডেগুলো আমরা একসঙ্গে দেখতাম। বিশ্বকাপ, পাকিস্তান-বাংলাদেশ ওয়ানডে−আমরা সোবহানবাগে, শহীদ ভাই গ্রিন রোডে। ওই দিন শহীদ ভাই আসেননি। পাকিস্তানের একটার পর একটা উইকেট পড়ছে। উত্তেজনায় কাঁপছে বাংলাদেশ। আমি, আমার বাচ্চারা শহীদ ভাইকে মিস করছি। আর মাত্র দুটি উইকেট বাকি। হঠাৎ দরজায় কলবেলের শব্দ। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে দেখি শহীদ ভাই, বললেন, 'আর থাকা গেল না, চলে এলাম।' বাসার সবাই আনন্দে চিৎকার করে উঠি। যেন আর একটি উইকেট পড়েছে। সেদিন ঢাকার রাস্তায় আমার বাচ্চাদের সঙ্গে শহীদ ভাই বিজয় মিছিলে উচ্ছ্বসিত ছিলেন। হইচই করলেন, নাচলেন। বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার অনেক রাস্তা ঘুরে আমরা ঘরে ফিরি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের আগামী যেকোনো বিজয়ের পূর্বমুহুর্তে শহীদ ভাই কি পুনরায় কলবেল বাজাবেন, বলবেন কি, 'আর পারা গেল না, চলে এলাম!

No comments: